সুবিধা ভোগী

সুবিধা ভোগী
বখতিয়ার উদ্দিন

সন্ধ্যা সাতটা।
আমি ছাত্র পড়িয়ে টিউশনি থেকে বাসায় ফিরছিলাম।
রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাঁটছি আর মাথায় ঘুরতেছে রাজ্যের হাজার চিন্তা। রাস্তার উপরে গাড়ী চলার সাথে সাথে আমার মাথার উপরেও কত কি চলে যাচ্ছে। আমি ম্যাচে ব্যাচলার থাকি।ম্যাচে কোন কাজের বুয়া নেই।নিজেরা রান্না করে খাই।ম্যাচের সদস্যরা এমন, রান্নার সময় যার যার মত করে গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। রান্না না হলে মনে হয় উপোস থেকে যাবে।নিজে যখন রান্না করি তখন ধীরে ধীরে যার যার মতো করে খেয়ে নীরব থাকে না।বলে, রান্নায় মরিচ হয়নি, লবণ কম হয়েছে। ইত্যাদি বলতে থাকে।এতো চিন্তার ভিতরে হঠাৎ মনে পড়লো, বাসায় রান্না করার কোন তরকারি নেই।
হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার দু’ পাশে দৃষ্টি দিতে লাগলাম।এই সময়ে রাস্তার ধারে মাছ , তরকারির ভ্যান দেখা পাওয়া যায়। না আজ কোন ভ্যান মনে হয় নেই। হঠাৎ দূরে দেখা গেল একটি মাছের ভ্যান গাড়ী। গাড়িতে বড় বড় দুইটি মাছের খাঁচা, তার দু’ পাশে দুইটি কেরাসিনের বাতি জ্বলতেছে।আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম, খাঁচা ভর্তি বড় বড় লইট্টা মাছ।মাছ মোটামুটি তাজা দেখা যাচ্ছে। তবে সাথে বরফ দেওয়া আছে।ভাবলাম, এক কেজি কিনলে মন্দ হবে না।কোন রকম দুই এক অক্ত হয়ে যাবে।
মাছ বিক্রিতার কাছে গিয়ে কিছু ক্ষণ ক্রেতা আর বিক্রিতার গতিবিধি লক্ষ্য করলাম।ক্রেতা আর বিক্রিতার মাঝে দর কষাকষি হচ্ছে অনেক।দর আর মাছ পছন্দ – অপছন্দ নিয়ে নানান জনে নানান মন্তব্য করে যাচ্ছে। টিউশনিতে খুব দুষ্ট টাইপের ছাত্র পড়িয়ে এসে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই সব দেখে মনের ভিতর একটু ভালো লাগছিল।অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ষাট টাকা দরে এক কেজি মাছ নিবো, দরদাম ঠিক করে নিলাম।
দর ঠিক করার সাথে সাথে দেখলাম, বাইশ বছরের একটি যুবতীর সাথে মাছ বিক্রিতার বাক বিতন্ডা চলে যাচ্ছে।
ঘটনা হলো, মেয়েটি একটু আগে এক কেজি মাছ কিনেছিল।মাছের মধ্যে কেরাসিনের গন্ধ তাই মাছ ফেরত দিতে এসেছে। কিন্তু বিক্রিতা মাছ ফেরৎ নিতে রাজি নয়।অনেক কথা কাটাকাটির পর বিক্রিতা শুধু মাছ বদলিয়ে দিতে রাজি হয়।মাছ বদলিয়ে দেওয়ার পর মেয়েটি মাছে কেরাসিন আছে কিনা আমাকে পরীক্ষা করতে বলে।আমি নাকের সাহায্যে গন্ধ শুকে বললাম,একটু কেরাসিনের গন্ধ রয়ে গেছে।
আমার কথা শুনে মেয়েটি সম্পূর্ণ মাছ ফেরত নেওয়ার জন্য বিক্রিতাকে জোর দিতে লাগলো। এবার আমি বিক্রিতার পক্ষ নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম, আপনি অর্ধেক মাছ কুটে এনেছেন। কুটা মাছ বিত্রিতা ফেরত নিবে কেন?এই গরীব মানুষ, মাছ বিক্রি করে কোন রকম কষ্ট করে খায়।আমি সহজ সরল ভাবে মেয়েটির সামনে আরো যুক্তি দাঁড় করাতে লাগলাম।আমার যুক্তিতে মেয়েটি একটু গলে গেল।ভেবেছিলাম মেয়েটি রেগে যাবে।গলে যাওয়ার সুবাধে সমাধান দিলাম, কুটা মাছ ফেরত নিবে না।আর বাকি মাছ ফেরত নিয়ে যে পরিমাণ হয় তার টাকা ফেরত দিবে।
সমাধান মতো বিক্রিতাও রাজি হলে কাজ হয়ে গেলে মেয়েটি বাড়ি চলে যায়। ব্যাচারা মাছ বিক্রিতা আমার প্রতি একটি খুশি হলো।
পরিবেশখানী একটু শান্ত হলো।ক্রেতার সংখ্যা কমে এসেছে। হঠাৎ ক্যারেন্ট চলে যাওয়ায় শহরের রাস্তার লাইট নিভে গিয়ে রাস্তা ঘাট অন্ধকার হয়ে গেছে। দোকানের বিকল্প বাতি আর মাছ বিক্রিতার কেনাসিনের বাতির সাহায্যে ভালো ভালো মাছ গুলো মেপে নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে যাবো তখন মেয়েটি আর তার ষাট বছরের বৃদ্ধ পিতা কুটা মাছ গুলো নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসে।বৃদ্ধ এসে মাছ বিক্রিতাকে গালাগাল দেওয়া শুরু করল।আর কুটা মাছগুলে ফেরত নেওয়ার জন্য জোর দিতে লাগলো। মাছ বিক্রিতা বৃদ্ধার মার খাওয়ার ভয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছিল তখন আমি রেগে গিয়ে বললাম,কুটা মাছ ফেরত নিবে কেন?
বৃদ্ধাও রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে বলল, মাছে কেরাসিন দিয়ে বিক্রি করবে কেন?
আমিও জোর গলায় বললাম,বেচারার বাতি থেকে না হয় একটু লেগেছে, আর তোমরা মাছ দেখে নিবে না?মাছে কেরাসিন থাকলে তাহলে কুটবে কেন?এই কুটা মাছ বিক্রিতা নিয়ে কি করবে?
আমার কথা শেষ না হতে বৃদ্ধা ষাটের মতো আমার গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার শার্টের কলার টেনে ধরল।আমিও বৃদ্ধার গলা টিপে ধরলাম।তখন বৃদ্ধার মেয়ে আমাকে উদেশ্য করে বলল, আপনি যেখানে সেখানে নাক গলান কেন?
তখন মূহুর্তে দেখি ষাট সত্তর জন লোক জড়ো হয়ে গেছে। মাছ বিক্রিতা টাকা ফেরত দিয়ে তাড়াতাড়ি পালিয়ে গেল।আমি বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে টাকা না দিয়ে কেনা মাছ হাতে নিয়ে কৌশলে ভিড় থেতে বের হয়ে বাসায় চলে আসি।
টাকা ফেরত পেয়ে ফোসাতে ফোসাতে মেয়েকে নিয়ে বৃদ্ধা বাড়ি ফিরে।মাছ বিক্রিতা জন গণের পিঠা খাওয়ার ভয়ে মাছের ভ্যান নিয়ে আগে পালিয়েছে।লোকেরা ঘটনার কিছু বুঝতে না পেরে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ছত্র ভঙ্গ হয়ে যার যার অবস্থানে চলে যায়।।

Akhirol Ellin was born in Sakhipur, Tangail. He grow up there. He is a brilliant student since childhood. He passed the PEC examination with a GPA-5. Due to covid-19, his JSC examination was canceled…

Post a Comment